"এই যে আপু"
বান্ধবীদের সাথে ক্যাম্পাসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।এমন সময় পিছন থেকে একটা ছেলে ডাক দিল।ক্যাম্পাসের জুনিয়রই মনে হল।তাই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আমাকে বলছো??
-জ্বী, ইয়ে মানে,আই লাভ ইউ।
আমিতো পুরাই অবাক।যেখানে পুরা ক্যাম্পাসের ছেলেরা আমার সাথে কথা বলতেও ভয় পায়,সেখানে এই ছেলে ডিরেক্ট প্রপোজ করতেছে।রাগে মেজাজ পুরাই গরম হইয়া গেল।কিছু বলতে যাব এমন সময় ছেলেটা বলল,
-আসলে আপু সরি।আমি বন্ধুদের সাথে বাজী ধরছি।আমি যদি আপনাকে প্রপোজ করতে পারি এবং আপনি যদি আমার কাছ থেকে এই ফুলটা নেন তাহলে আমাকে ওরা ১ হাজার টাকা দিবে।প্লিজ আপু ফুলটা নেন।
কিছুটা অবাক হলাম।আমি বললাম,
-আমারে নিয়া ব্যবসা করতে চাও?
-নাহ আপু।আসলে ওদের কাছে আমার সাহসিকতার পরীক্ষা দিতাছি।
-ওহহ আচ্ছা, জানো তাহলে আমার সম্পর্কে।
-জানবো না আবার।পুরা কলেজ জানে।প্লীজ আপু ফুলটা নেন।জুনিয়র হিসেবে রিকুয়েস্ট।
-ফুল নিলে আমার লাভ কি?
-আপনি যদি ফুলটা নেন তাহলে বাজীর ৩০% আপনার।অর্থাৎ ৩০০ আপনার,৭০০ আমার।
-নাহ,তা হবে না।৫০% দিলে নিতে পারি।
-আচ্ছা, ঠিক আছে।নিন।
আমার হাতে একটা ফুল দিয়ে হেটে চলে যেতে লাগল।আমি ডাক দিলাম,
-এই ছেলে, এই
-জ্বী আপু।
-টাকা কখন দিবা??
-এই যে একটু পরেই দিয়া যাইতেছি।
-নাম কি তোমার??
-সিফাত।
-কোন ইয়ার?
-সেকেন্ড ইয়ার আপু।
-ঠিক আছে।
একটু পর তো দূরের কথা, সারাদিনে ওই পোলার আর খোজই পেলাম না।আমিও আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।ও হ্যা,আমি টুসি।অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়াশোনা করতেছি।এখনও প্রেম করা হয়নি।যদিও আমি দেখতে খারাপ না।আসলে একটু বেশিই রাগি আর একগুয়ে আমি।যখন যেটা মনে হয়, সেটাই করি।এইজন্য কেউ প্রপোজ করার সাহস পায় না।আমারও আর প্রেম করা হয় না।কারো সাথে কেমিস্ট্রিই জমে না । তাই আমারও আর প্রেম করা হয় না।
পরেরদিন ক্যাম্পাসে গিয়ে আমি পুরাই অবাক। সবাই বলাবলি করতেছে আমি নাকি সিফাতের প্রপোজাল একসেপ্ট করছি। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। বুঝলাম যে এসব সিফাতের কাজ। হারামজাদা সবাইকে বলে বেড়ায় সে আমি ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করছি। আমার সাথে গেম খেলে, সামনে পাইয়া লই। সিফাত রে ক্যাম্পাসে খুজতে লাগলাম। এক কর্নারে দাঁড়াইয়া বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ছিল। পিছন থেকে কলারটা ধরলাম
-ওই হারামজাদা আমি নাকি তোর প্রপোজাল একসেপ্ট করছি।
- না আপু। কি বলেন এইসব।
- কিচ্ছু বুঝনা না?? সারা ক্যাম্পাসে বলছোস আমি তোর প্রপোজাল একসেপ্ট করছি।
-আমি কিছু বলি নাই আপু ।সবকিছু ঔই হারামজাদাদের কাজ।
- ওয়েট, এই বিষয় নিয়ে পরে কথা বলতেছি।আমার টাকা কোথায়??
-কোন টাকা আপু??
- কোন টাকা মানে?? বাজি 500 টাকা না আমাকে দেওয়ার কথা। টাকা দে তাড়াতাড়ি।
- টাকা তো নাই আপু খরচ করে ফেলেছি।
- এইগুলো চলবে না তোর জন্য অনেক ছোট হতে হইছে ক্যাম্পাসে। আজকে তোমার মাফ নাই চান্দু।
-আপু ছাইড়া দেন আমি পিচ্চি মানুষ।
-তুই পিচ্চি?? তুই হইলি বদের হাড্ডি ।আর তুই কত বড় বদ হইছো আজকে আমি দেখবো।
- সরি আপু।
-কোন সরিতে কাজ হবেনা। তোর শাস্তি হইল ,কানে ধরে এই ক্যাম্পাস চারবার ঘুরবি।
- আপু মান ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে।
- থাপড়াইয়া তোমার মান ইজ্জত সব বের করে দিমু। যা বলছি তাই কর।
-অন্য কোন শাস্তি দেন আপু।
-ওকে, চল।আজকে আমাদের সব বান্ধবীদের রেস্টুরেন্ট এ খাওয়াবি।
-সবাইকে??
-হুমমম,সবাইকে।
-সবাইকে খায়াইতে গেলে তো আমি শেষ।
-কোন কথা শুনব না।হয় কানে ধরে ক্যাম্পাস ঘুরবি নাহয় আমাদের খাওয়াবি।
-আচ্ছা ঠিক আছে।ক্লাস শেষে খাওয়াবো।
-উহু আগের বারের মত ফাঁকিবাজি চলবে না।এখন খাওয়াবি।
-ঠিক আছে,চলুন।
সব বান্ধবীদের নিয়া রেস্টুরেন্ট আসলাম।আজকে ওরে বুঝাবো কত ধানে কত চাল।সবাইকে বল্লাম যার যা ইচ্ছা খেতে।বিল সিয়াম দিবে।
সবাই যে যার মত করে খাচ্ছে।আমিও খাচ্ছি।আর বেচারা সিয়ামের দিকে তাকাচ্ছি।ওর মুখটা দেখার মত হইছে।ওর এক্সপ্রেশন দেইখা আমার প্রচুর হাসি পাইতাছে।১০ জন মিলে খাচ্ছি।বিল কমপক্ষে তো ৫ হাজার টাকা হবেই।
-আপু,একটু ওয়াশরুমে যাই??
-না,না।কোন ওয়াশরুম না।
-ইমারজেন্সি আপু।
-আচ্ছা,যা।
খাওয়া শেষ করে বসে আছি।সিয়াম এখনো ওয়াশরুম থেকে আসে নাই।মানুষ এতক্ষণ ক্যামনে ওয়াশরুমে থাকে।ওয়েটার এসে বিল দিয়ে গেছে।বিল আসছে ৪৮০০ টাকা।বিল দেখে সবাই হাসাহাসি করতাছি।এরমধ্য আবার ওয়েটার আসল বিলের জন্য।
-এক্সকিউজমী ম্যাম,বিলটা।
-আচ্ছা,আমাদের সাথে যে একটা ছেলে এসেছিল....
-ঐ স্যার তো চলে গেছে।আর আপনাকে এই কাগজটা দিতে বলল।
-আচ্ছা,আপনি একটু পরে আসেন।
মেজাজ এবার পুরাই খারাপ হইয়া গেল।ওরে মুরগি বানাইতে যাইয়া আমরাই মুরগি হইয়া গেলাম।এখন এত টাকা কোথায় পাব??একবার ক্যাম্পাসে যাইয়া নেই,দেখব ওয় ক্যামনে ক্যাম্পাসে থাকে।ওহ হ্যা,কাগজের কথা তো ভুলেই গেছিলাম।কাগজ খুললাম।তাতে লেখা,
"অন্যের কাছ থেকে জোর করে কোন কিছুই আদায় করা ঠিক না।হোক সেটা ট্রিট অথবা ভালবাসা।"
মেজাজ আরো খারাপ হইয়া গেল।সবার কাছে থেকে মিলাইয়া কোন রকমে বিল দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আসলাম।
চলবে
Comments
Post a Comment